কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের প্রাপ্তবয়স্কদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা ভিত্তিক বিশেষ ‘ট্যাগ টিম’

দ্বারা অনুবাদ বেঙলিস্ অফ নিউইয়র্ক

সাধারণত, হ্যামট্রাম্কের চিলড্রেনস ক্লিনিক অফ মিশিগান এর নার্স প্র্যাকটিশনার, ফারজানা নূর, কাঁটা ক্ষত এবং স্ক্র্যাপ ব্যান্ডেজ করা, সর্দি-কাশির চিকিৎসা করা এবং বাচ্চাদের প্রথম শট দেওয়ার কাজেই অভ্যস্ত। কিন্তু এর সব কিছুই বদলে যায় গত বছর হ্যামট্রাম্কে যখন বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের মধ্যে মহামারীটি ছড়িয়ে পড়েছিলো। এই সংকটের মাঝে যখন আশেপাশের স্বাস্থ্য সেবাকর্মীরা হঠাৎ করে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন, তখন নূর তার অফিসে প্রবীণ বাংলাদেশী মহিলা রোগীদের ভিড় দেখতে শুরু করলেন, যারা প্রায়শই ওনাদের পরিবারে কয়েক প্রজন্ম ধরে প্রাথমিক সেবাদানকারীর ভূমিকা পালন করছেন।

নূর একজন বাংলাদেশী আমেরিকান হিসেবে নিজেকে পরিচিত এক জায়গায় ফিরে পেলেন, কারণ অনেক বয়স্ক রোগীরাই তাদের সন্তানদের সাথে নিয়ে আসতেন ইংরেজী থেকে সিলেটিতে স্বাস্থ্য পরিকল্পনাগুলো অনুবাদের কাজে সহায়তার জন্য।

নূর বলেন, “যখন আমার (একজন বয়স্ক) রোগী থাকে, যদিও আমি তাদের যা বলছি তা তারা কিছুটা হলেও বুঝতে পারে, তাদের সন্তানেরাও যদি এই ব্যাপারগুলো বুঝে নিতে পারে তাহলে তারা বাড়ি ফিরে সেটাকে পুনরায় বোঝাতে সহায়তা করতে পারে।”

“এটা অনেকটা একটি দায়িত্বের মতো।”

প্রবাসী সম্প্রদায়ের জন্য ভাষা একটি দীর্ঘকালীন প্রতিবন্ধকতা, যা ইউটিলিটি বিল বোঝা থেকে শুরু করে শিক্ষকদের চিঠিপত্রের বিনিময় এমনকি সরকারি সহায়তা পাওয়ার মতো বিষয়গুলোকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা কঠিন করে তোলে।

গতানুগতিক বাংলাদেশী পরিবারগুলোতে যারা সেবাদানকারী এবং যারা সেবাগ্রহণকারী, তাদের মধ্যকার সীমারেখাটি প্রায় অস্পষ্ট কারণ শিশুরা প্রায়শই বাবা-মা, দাদা-দাদি, খালা এবং চাচাদের জন্য বার্তাগুলো অনুবাদ করে দেয়। ঠিক তেমনি, সেবাদানকারীদের পঞ্চাশ বছর বয়স হয়ে গেলেও ছোট বাচ্চাদের ও প্রবীণ পিতা-মাতার দেখাশোনার দায়ভারটি একইভাবে তাদের উপর পড়ে ।

একটি নন পার্টিশন সিভিক এনগেজমেন্ট সংস্থা, ‘এশিয়ান অ্যান্ড প্যাসিফিক আইল্যান্ডার আমেরিকান ভোট-মিশিগান’ এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রেবেকা ইসলাম বলেন, তার সংস্থা এই মহামারী চলাকালীন সময়ে ভাষাগত সমস্যা সমাধান করতে শেয়ার করা যায় এবং সবার কাছে সহজে পাঠানো যায় এমন একটি তথ্যযুক্ত গুগল ড্রাইভ তৈরি ও বিতরণ করেছে।

ইংরেজীভাষীরা সাধারণত এড়িয়ে চলে এমন কিছু টিপস যেমন ঠিকমতো হাত ধোঁয়া, কীভাবে সামাজিক দূরত্ব রাখতে হয়, ভ্রমণ সুরক্ষায় সতর্কতা এবং কীভাবে একজনের মুখকে সঠিকভাবে ঢাকতে হয় তা এই গুগল ড্রাইভে প্রকাশিত হয়েছে কয়েক ডজন ভাষায়। 

তিনি বলেন “যেমনটি আমরা জানি … আমাদের বেশ কয়েকটি এশিয়ান আমেরিকান এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের সম্প্রদায় এখনো এসব জানে না এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের মতো তাদেরও এই ব্যাপারগুলো জানার জন্য পর্যাপ্ত সুবিধা নেই” ।

ইসলাম আরো বলেন, “অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যাদের প্রথম ভাষা ইংরেজী নয়, তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে সক্ষম হবেন না কারণ তারা যে ভাষায় কথা বলেন সেই তথ্যগুলো সে ভাষাতে অনুবাদ করা হয় না।”

“মিশিগানে অবস্থিত বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রেও এই একই ঘটনা,” ইসলাম বলেন। সম্প্রতি, এপিআইএ ভোট-মিশিগান ২০২০ সালের নির্বাচনের ভোটিং উপকরণ অনুবাদ করার চেষ্টা করেছিলো অন্যদের সাথে যোগদান করে।

মেট্রো ডেট্রয়েটে যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম বাংলাদেশী-আমেরিকান সম্প্রদায়ের বাসস্থান। পিউ রিসার্চ সেন্টার এর ২০১৭ সালে প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ অনুসারে, ডেট্রয়েটের বাংলাদেশীদের জনসংখ্যা ১০,০০০ ছিলো। এপিআইএ-মিশিগানের ইসলাম বলেন যে এই জনসংখ্যার আকারটি ভালোভাবে নথিভুক্ত নয়, তবে মিশিগানে এই সংখ্যাটি ৩০,০০০ থেকে ১০০,০০০ এর মধ্যে হবে বলে অনুমান করেন তিনি । আকারে এই সম্প্রদায়টি কেবল নিউইয়র্ক সিটি এবং ওয়াশিংটন ডিসির পরে রয়েছে । ২০২০ সালে যখন করোনা ভাইরাসের প্রভাবে মেট্রো ডেট্রয়েটে লন্ডভন্ড হয়ে যায়, তখন এই অঞ্চলের বাংলাদেশী সম্প্রদায় প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

অনেক বাংলাদেশী পরিবার বিভিন্ন প্রজন্মের পরিবারের সদস্যদের দ্বারা গঠিত, যা সামাজিক দূরত্ব পালন করাকে কঠিন করে তোলে। সাধারণ জনগণের চেয়ে এই পরিবারগুলোর দারিদ্র্য সীমার মধ্যে বসবাসের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি (পিউ রিসার্চ সেন্টার অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ শতাংশ বনাম সমস্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী-আমেরিকানদের ১৯ শতাংশ)। এর চেয়ে বড় কথা, সকল বাংলাদেশীরা বাংলা ভাষার একই উপভাষায় কথা বলে না। মেট্রো ডেট্রয়েটে বেশিরভাগ বাংলাদেশী-আমেরিকান যারা বাংলায় কথা বলেন, তারা সিলেটি উপভাষা ব্যবহার করেন।

নূর বলেছেন, শুদ্ধ বাংলা – বাংলাদেশের বাংলার জাতীয় উপভাষা – অনুবাদ করা উপকরণগুলোতে প্রায়শই ব্যবহৃত হয়, যা মেট্রো ডেট্রয়েটের বাঙালিদের জন্য একটি সমস্যার কারণ।

এই সমস্যাগুলোর কিছুটা মাথায় রেখে, নূর এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীদের কাছে এটি স্পষ্ট যে সামগ্রিক কথা ভেবেই আরও একটি পদ্ধতির প্রয়োজন।

নিউইয়র্কে, যে সকল সামাজিক পরিষেবা সংস্থাগুলো দক্ষিণ এশিয়ার জনগণদের সেবা করে, তারা এই সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছানোর এবং মহামারীকালীন সময়ে বাড়তি যত্নের প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করার অন্যান্য উপায় খুঁজছে।

নিউইয়র্কে মানুষকে প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে সহযোগিতা করা হয় এমন একটি প্রতিরক্ষা সংস্থার সহিংসতা বিরোধী কর্মসূচি ‘সখী- ফর সাউথ এশিয়ান উইমেন,’ এর পরিচালক শায়দা রশিদ। তিনি বলেন যে তার সংস্থা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানায় যে ওই সময় তাদের অনেকেরই ভাষা সহায়তার প্রয়োজন ছিলো। 

তিনি আরো বলেন, “আমাদের ক্লায়েন্টদের (প্রায়) ৮০ শতাংশেরই ভাষাজনিত বাধা রয়েছে, এবং বুঝতেই পারছেন যে তারা তাদের মাতৃভাষায় কথা বলতে পছন্দ করেন।”

রাশিদ জানান যে নিউইয়র্কের ভাষা অ্যাক্সেস প্ল্যান শহরটির এরকম কিছু সমস্যা সমাধান করতে সহায়তা করে। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে যে দশটি ভাষায় বিনামূল্যে দোভাষী সেবা পাওয়া যায়, তার মধ্যে একটি হলো বাংলা ভাষা ।

“আমরা আমাদের ক্লায়েন্টদের সবসময় বলি যে প্রতিটি পরিষেবাকারীকে বলতে যে আমার একজন অনুবাদকের দরকার কারণ দোভাষী বা অনুবাদ পরিষেবা নিউইয়র্ক সিটির সকল বাসিন্দার একটি অধিকার।”

তবুও, ভাষা সীমাবদ্ধতা রয়েই গেছে। যারা কলটি করছেন তারা কোনও পরিষেবাকারীর সাথে সংযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে অপেক্ষা করেন, অথবা দোভাষীরা সবসময় সময় মতো উপস্থিত হন না, বা ভুলভাবে তথ্যের ব্যাখ্যা করেন বা তাদের নিজস্ব মতামত মিলিয়ে করেন এবং কেউ কেউ ক্লায়েন্টের উপভাষা বলতে পারেন না। রশিদ আরও বলেন যে কলাররা যেভাবে সেবা পান তার গুণগতমানের ক্ষেত্রে লিঙ্গও একটি ভূমিকা রাখতে পারে।

সংগঠনটি যেটি কার্যকরী বলে মনে করছে তা হলো অনুবাদ করার বাইরেও এই সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে সহায়তা করে এমনসব সেবা প্রদান করা ।

২০২০ এ মহামারীর বেশিরভাগ সময়ে, ‘সখী’ দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়ের প্রায় ১৫০০ সেবা কল পরিচালনা করেছে এবং তাদের প্রয়োজনীয়তায় সাহায্য করেছে, যার কারণে তাদের সংস্থার কেস ভার ২০১৯ সালের ৪০০ থেকে বেড়ে ২০২০ সালে ৪৫০ হয়েছে, এবং তারা ৫০ থেকে ৬০ জন ক্লায়েন্টকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে যার পরিমাণ ছিলো ৩০০ ডলার থেকে ১,৫০০ ডলার পর্যন্ত। তিনি বলেন, যারা এদেশে অবৈধ তাদেরকেও সখী সংহতি তহবিল থেকে গ্রোসারী ও ওষুধের জন্য অর্থ প্রদান করে সহায়তা করা হয়েছিলো।

সখীর ওয়েবসাইটে মহামারীর সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য, খাদ্য প্যান্ট্রির অবস্থান, পারস্পরিক সহায়তা, বিল সহায়তা, এবং কীভাবে সুরক্ষা পরিকল্পনাটি তৈরি করতে হবে সে সম্পর্কে ইনফোগ্রাফিক্স সহ প্রচুর তথ্যের একটি তালিকা রয়েছে। গ্রুপটির প্রো বোনো আইনী পার্টনাররা ওয়ার্কশপ এবং ক্লিনিক সহ পারিবারিক আইন এবং অভিবাসন সম্পর্কিত আইনী সহায়তা দিয়ে থাকে। সখী ৭৩৯ ক্লায়েন্টের জন্য একটি সাপ্তাহিক নিউজলেটার প্রকাশ করে। ওনাদের দ্বারা প্রকাশিত বেশিরভাগ তথ্য বাংলা, হিন্দি এবং উর্দু সহ নয়টি ভাষায় পাওয়া যায়।

একটি উদাহরণে রশিদ বলেন, একজন বাংলাদেশী মায়ের কথা যিনি একটি নবজাতক শিশু এবং ৩ বছরের শিশুর জননী, তিনি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এবং সহায়তার জন্য সখীর সাথে যোগাযোগ করেন। বিনামূল্যে ছোট বাচ্চাদের চাইল্ড কেয়ার সেবা প্রদান করে এমন একটি সংস্থা প্রজেক্ট নিউইয়র্কসের এর সাথে যোগাযোগ করে সেই বাচ্চাগুলোর জন্য কুইন্সে সেবা প্রদানকারী খুঁজে দেয়া হয়, যতোদিন তাদের পরিবারটি সুস্থ না হয় ততোদিন পর্যন্ত।

রশিদ বলেছেন, মহামারীটি ভাইরাস ছাড়া আরো অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে। ক্লায়েন্টদের মধ্যে উদ্বেগ ও হতাশা ছড়িয়ে পড়ে – যাদের মধ্যে অনেকেই পূর্বে সঙ্গী দ্বারা সহিংসতার শিকার হয়েছেন – যাদের একবার এক বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্টে বাড়িতে আটকে যাওয়ার পরে নিরাপদ জায়গার অভাব হয়।

Laal NYC (laal -এর অর্থ বাংলায় লাল, বাংলাদেশী মহিলা ক্ষমতায়নের প্রতীক) নিউইয়র্কের আরেকটি এরকম সম্প্রদায় ভিত্তিক পরিষেবা সংস্থা, যারা ব্রঙ্কসের নরউড পাড়ায় বাংলাদেশীদের সেবা করছে।

লালের স্ট্রেটেজিক ডেভেলপমেন্ট সমন্বয়কারী ইশরাত আইশী বলেন যে গত বছর লালের আয়োজকরা মার্কিন জনগণনা পূরণের জন্য কমিউনিটি সদস্যদের স্মরণ করিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানাতে কল করার উদ্যোগ নিচ্ছিলেন, তবে তারা দ্রুত এই কলগুলো সুস্থতা এবং প্রয়োজনীয় জিনিসের কথা জানাতে পরিচালনা করেন।

ফোন কল করার সময় এই আয়োজকরা যা জানতে পারলেন তা হলো – এই জনগোষ্ঠীর সেবাগ্রহণকারী প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ নিবন্ধনহীন – যারা মহামারীর কারণে ত্রাণ, খাদ্য এবং অন্যান্য শহর পরিষেবা থেকে বঞ্চিত ছিলো।

“আমরা বেঙলি মেন্টাল হেলথ ইনিশিয়েটিভ (অন্য একটি এনওয়াইসি-ভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ) এর সাথে অংশীদারিত্বে নির্দেশিকা বিতরণ করেছি যা সাংস্কৃতিকভাবে এবং ভাষা ও বাক্যের ব্যাপারে সচেতন ছিলো, এটা চিহ্নিত করতে যে আসলে কোভিডের লক্ষণগুলো কী এবং এর থেকে আরো কী কী সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে ।

আইশী বলেন যে সিলেটি বা শুদ্ধ বাংলা যারা ভালো বোঝেন এমন লোকদের নিয়োগ করা হয়েছিলো এদের কী কী প্রয়োজন তা জানতে এবং তাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করার জন্য। এমনকি নরউড পাড়ায় ক্লাস এবং অন্যান্য প্রোগ্রামিং কাজের জন্য লাল যথেষ্ট পরিমাণে সিলেটি-স্পিকার নিয়োগ করেছিলো। “সেই অর্থে তাদের কাছে বাড়িতে বা সাহায্য নেওয়ার তেমন কোনো লোকজন নেই এবং তাই এই জায়গাটি পূরণ করার জন্য এই সকল কথোপকথন (আমাদের) দলের সাথে,” আইশী বলেন।

মেট্রো ডেট্রয়েটের বাংলাদেশীদের সহায়তার জন্য এই সামগ্রিক দিকগুলো নিউইয়র্কের সংস্থাগুলির প্রভাবের সাথে তাল মেলাতে এখনো অনেক পিছিয়ে, যদিও নূর এবং অন্যান্যরা সেখানে পৌঁছানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।

নূর মার্চ এবং এপ্রিল মাসে ক্রগার ফার্মেসির সাথে অংশীদারিত্বে পপ-আপ ভ্যাকসিন সেন্টার পরিচালনা করেন, যাতে প্রায় ২ হাজারেরও বেশি মানুষকে সেবা দেওয়া হয়। মে মাসে, চিলড্রেনস ক্লিনিক অফ মিশিগান একটি টিকা দেওয়ার কেন্দ্র পরিণত হয়েছিলো।

“আমরা শনি ও রবিবারে গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ জনকে এবং সোম থেকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে ৭৫ থেকে ১০০ জনকে টিকা দিয়ে থাকি,” তিনি বলেন।

স্থানীয়ভাবে, ইপসিল্যান্টির ইস্টার্ন মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজনগুলো শনাক্ত করার জন্য কাজ করছেন, যেন তারা পরবর্তীতে আরও সামগ্রিক পদ্ধতি নিয়ে কাজ করতে পারেন।

ইএমইউ এর সেন্টার ফর হেলথ্ ডিসপারিটিস্ ইনোভেশনস্ অ্যান্ড স্টাডিজ্ বাংলাদেশী সম্প্রদায় সহ মিশিগানে নিম্মবিত্ত এশিয়ান আমেরিকান সম্প্রদায়ের মানুষদের প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে একটি সমীক্ষা তৈরি করেছে। এই কেন্দ্রটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৪০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি যারা ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিস্ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এর রেশিয়াল এথনিক অ্যাপরোচেস্ টু কমিউনিটি হেলথ্ (আরইএএইচ) প্রোগ্রাম থেকে তহবিল পেয়েছে। ইএমইউ গ্রুপটি সম্প্রতি হ্যামট্রামকের বাংলাদেশী জনসংখ্যাকে ফ্লু এবং কোভিড -১৯ ভ্যাকসিন সম্পর্কে জানানোর জন্য আরো তহবিল পেয়েছে।

পূর্বে ইএমইউ উদ্যোগের প্রকল্প পরিচালক হিসাবে কর্মরত নার্সের শিক্ষিকা, এবং কেন্দ্রের সমন্বয়কারী, সারা ললি বলেন যে গবেষকরা কিছু সামাজিক নির্ধারক শনাক্ত করতে সিডিসির সাথে কাজ করেছেন- যেমন আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং সহজে স্বাস্থ্য সেবাদানকারীদের সাহায্য পাওয়া –  নির্দিষ্ট জিপ কোডগুলিতে কোন জনসংখ্যার সর্বাধিক সহায়তার প্রয়োজন। এই তথ্য ব্যবহার করা হয়েছিলো আরো শিক্ষার প্রয়োজন কোথায় তা নির্ধারণ করতে।

স্থানীয়দের কাছ থেকে কিছু উদ্বেগের বিষয় জানার পর এই দলটি চিকিৎসক, নির্বাচিত সরকারি কর্মকর্তা, এমনকি জেএ্যান্ডই কমিউনিটি সার্ভিস এবং ডেট্রয়েট ফ্রেন্ডশিপ হাউজ এর মতো সমাজসেবা এজেন্সিগুলোর গবেষকদের মতো এ সম্প্রদায়ের কিছু বিশ্বস্ত সদস্যদের কাছেও সহায়তা চেয়েছে – এ ব্যাপারগুলো সর্ম্পকে তথ্য সংগ্রহ করতে ও তাদের জানাতে। ললি বলেন, তারা দুটি শ্রোতা অধিবেশন আয়োজন করে এবং কিছু মানুষদের প্রশিক্ষণ দেয় যেন তারা স্থানীয়দের সাহায্য করতে পারে কোভিড -১৯ এর ভুল ধারণা এবং সঠিক তথ্য সম্পর্কে কীভাবে কথা বলতে হয় সে ব্যাপারটি জানতে।

“আমরা এমনিতেই অনুমান করতে পারতাম যে মানুষ আসলে কী জানতে চায়, তবে আমরা কেন তাদেরকেই জিজ্ঞাসা করি না যে তারা কী চাইছে, বুঝলেন তো, কেন মানুষের উদ্বেগের বিষয়গুলো আমরা নিজেরাই খুঁজে বের করে নিই না,” লেলি বলেন। “আমরা সবাইকে মাঠে নেমে কাজ করতে বলছি।”

ফলস্বরূপ, গবেষকরা এই সম্প্রদায়ের তথ্যের প্রয়োজনীয়তাগুলো শনাক্ত করতে সক্ষম হন, এবং পেশাদার অনুবাদ পরিষেবা ব্যবহার করে সেই তথ্যগুলো বাংলায় মুদ্রিত করেন। আরইএএইচ হ্যামট্রাম্ক পাবলিক স্কুলগুলোর সাথে অংশ নিয়ে স্কুল মেসেঞ্জার সিস্টেম ক্লাস ডোজোর মাধ্যমে এই তথ্য ছড়িয়ে দেয়।

এই দলটি মেট্রো ডেট্রয়েটে ছয়টি পপ-আপ কোভিড -১৯ ভ্যাকসিন ক্লিনিক সরবরাহ করেছিল, যার মধ্যে বাংলা এবং বাংলাভাষী ভাষার অনুবাদক রয়েছে, এবং এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে ৫০০ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে।

“আমরা বিদ্যমান বৈষম্যগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত রয়েছি এবং ব্যক্তিগতভাবে আমি এমন একটি পয়েন্টে পৌঁছাতে খুব উৎসাহিত যেন আমরা কিছু মানুষকে টিকা দেওয়া শুরু করতে পারি, যার ফলে লোকে মুখে এই খবরটি ছড়িয়ে পড়ে, জানেন তো অনেকে আমাকে বলেছে যে এটি সেইসব বড় জিনিসগুলোর মধ্যে একটি, যা একে অপরের মাধ্যমে তথ্য পাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায়,” ললি বলেন।

ললি বলেন যে এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো শহর, রাজ্য এবং ফেডারেল প্রতিনিধিদের সাথে কাজ করে এই সম্প্রদায়ের জন্য একটি টেকসই নীতি তৈরি করা ।

এই তথ্য মেট্রো ডেট্রয়েটের বাঙালি জনগোষ্ঠী যেখানে রয়েছে সেখানকার অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবাকর্মীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ্য হতে পারে।

নূর বলেছেন, বাংলাদেশী সম্প্রদায় স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের চেয়ে সুস্বাস্থ্য ও ভালো জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত। তিনি বলেন যে স্বল্প সাক্ষরতার সাথে এই ব্যাপারটি সরাসরিভাবে যুক্ত।

“এই সম্প্রদায়ের অবশ্যই ডাক্তারের অফিসের বাইরে আরও অনেক কমিউনিটির প্রয়োজনীয় উপকরণ দরকার,” তিনি বলেন।

তিনি বলেন, যেহেতু ১৯৯০ এবং ২০০০ এর শেষভাগে অনেক বাংলাদেশী মিশিগানে চলে এসেছিলো, তাই তারা এখনও প্রথম প্রজন্ম। তিনি বলেন যে অভিবাসীদের অনেক শিশুই প্রথম কলেজে পড়াশোনার সুযোগ পায় এবং তারাই তাদের সম্প্রদায়কে প্রয়োজনীয় তথ্য উপকরণ দিয়ে সাহায্য করতে পারবে।

নূর বলেন, “এই ধরণের কিছু পরিষেবা এবং স্বাস্থ্যসেবা আরও সহজলভ্য করার জন্য একত্রিত হয়ে একই ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া এবং সহায়তা করা এখন আমাদের প্রজন্মের দায়িত্ব।”

credits:

( অঙ্কন – নায়না হুসেন। এখানে ক্লিক করে ইনস্টাগ্রামে তার আরও কাজ সন্ধান করুন)

বেঙলিস্ অফ নিউইয়র্ক (বিওএনওয়াই) এমন একটি মাধ্যম যারা বাঙালি সংস্কৃতি ও মানুষদের উদযাপন করে গল্প বলা, কমিউনিটি গড়া এবং এসবের আলোচনার মধ্য দিয়ে যেন এই অভিবাসী সম্প্রদায়টি আরো সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। আমাদের উদ্দেশ্য হলো বাঙালি (যেসব মানুষ বাংলাদেশ, ভারতের কিছু অংশ এবং পাকিস্তান থেকে আসেন) অভিবাসীদের প্রভাবিত করার এবং তাদের কাছে পৌঁছানোর, তবে মূলত নিউইয়র্কে, যেখানে আমাদের এই টিমের বেশিরভাগ সদস্যের বসবাস। 

এই সম্পাদকীয় প্রবন্ধটি লেখা হয়েছে দ্যা জেরন্টোলজিকাল সোসাইটি অফ আমেরিকা, দ্যা জার্নালিস্টস্ নেটওয়ার্ক ওন জেনারেশনস্ আ্যন্ড দ্যা সিলভার সেন্চুরি ফাউনডেশন এর একটি জার্নালিসম ফেলোশিপের সাহায্যে।

এই গল্পটি আরো প্রযোজিত হয়েছে নিউইয়র্ক অ্যান্ড মিশিগান সলিউশনস জার্নালিজম কোলাবরেটিভ এর সম্মিলিত সহযোগিতায়, যারা সংবাদ সংস্থা এবং বিশ্ববিদ্যালগুলোর সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সামাজিক সমস্যাগুলোর সফল প্রতিকার সম্পর্কে কঠোর এবং জোরালো প্রতিবেদন তৈরিতে নিবেদিত। এই গ্রুপটি সলিউশনস্ জার্নালিজম নেটওয়ার্ক দ্বারা সমর্থিত।

For the original English version of this story, click here.

Nargis Hakim Rahman

Author: Nargis Hakim Rahman

Nargis Hakim Rahman is a Bangladeshi American Muslim freelancer journalist and a mother of three. Nargis graduated from Wayne State University with a Bachelor’s degree in journalism, and a psychology minor. She is passionate about community journalism in the Greater Detroit area. She hopes to give American Muslims and minorities a voice in the press. She took part in a food journalism fellowship with Feet in 2 Worlds/WDET 101.9 FM radio. She writes for Haute Hijab, Brown Girl Magazine, Metro Detroit Mommy and other publications.

No Comments Yet

Leave a Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.